প্রতিটি কাজেরই একটি পক্ষ এবং আরেকটি বিপক্ষ রয়েছে। এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা একপাক্ষিক আলোচনা। যা আমার জন্য সুবিধার তা নিয়ে মেতে উঠা। এই প্রবণতা আমাদের এখনোও কমেনি।
মুক্তিযুদ্ধকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় আমাদের প্রতিজনের দেখা উচিৎ। এখানে যারা আমাদের শত্রু ছিলো তাদের ঘৃণা করস উচিৎ। যারা আমাদেরকে নিয়ে সুবিধা নিতে ও ব্যবহার করতে চেয়েছিলো তারাও আমাদের শত্রু। কেননা তারা আমাদের সাহায্য করার নামে আমাদেরকে তাদের দাস বানাতে চাওয়াটাই তাদের শত্রুতম আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। এখন তাদেরকেও আমাদের ঘৃণা করতে হবে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হওয়া। একটু খেয়াল করুন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ২৪ নিয়েই আমাদের দেশে দুই পক্ষে বিভক্ত। যারা সরকারে ছিলো আর যারা আন্দোলনকারী বা সাধারণ জনগন। আমাদের মধ্যেও ঘাপটি মেরে আছে একটি পক্ষ। যারা পিঠ বাঁচাতে এখন আমাদের সাথে আছে কিন্তু একদা এরাই এই কার্যক্রম বিকৃত করবে। এখনোও অনেকেই করছে। এই সমস্যা ৭০/৭২/৭৫ সালেও ছিলো এটাই স্বাভাবিক।
আপনাকে সত্যতা জানতে ও বুঝতে কোন পক্ষের বা কার আলোচনা শুনছেন ইহা বুঝতে হবে। সাথে সাথে একাধিক ব্যক্তির আলোচনা পর্যালোচনা করতে হবে। তবেই আপনি একটা সঠিক কথায় উপনিত হবেন। যেহেতু আপনি সেসময়ের কার্যক্রম দেখেননি সেহেতু আপনাকে জাজমেন্ট করতে হবে দুই ধরনের মানুষের কথা থেকেই। সেখান থেকেই সত্যটা বের হয়ে আসবে।
গতকাল মেজর ডালিমের বয়ান শুনলাম। এতদিন একটা ইতিহাস জানতো সবাই। তার খুব বেশী বিকৃতি আমার লাগেনি। বরং এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা যে কারনে বিদ্রোহ করেছিলো তারও একটা কারন ছিলো। সেই কারনেই একজন প্রধানকে শেষ পর্যন্ত মারতে হয়েছিলো। এখানে স্পষ্ট যে, এখানেও একটা প্লান ছিলো। এই গল্প এতদিন একভাবে শুনলেও এখন আরেকটা রঙ এসেছে।
মজার বিষয় হলো, মেজর ডালিম একজন বীর উত্তম। তিনি সরাসরি যুদ্ধ করেছেন দেশের জন্য। এই লাইন নিয়ে কারোই আপত্তি নেই। অথচ যখন তিনি তার অবস্থান ক্লিয়ার করেন তখন আপত্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা যুদ্ধে তার নিজ অবস্থান ও সামগ্রিক অবস্থান দুইটা বিষয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো তৎকালীন ভারত আমাদেরকে ৭ দফার মধ্যে আটকাতে চেয়ছিলেন। এই দফাগুলো আমরা ক্লিয়ারলি জানতাম না।
তরুণদের উচিৎ উনি সহ যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন যারাই আছেন তাদের বয়ান জন্মসুম্মখে ওপেন করা। সে সময়ের মুক্তিযোদ্ধা, কমান্ডার, বীর উত্তম সহ যারাই আছেন। এদেরকে সামনা-সামনি আনলে অনেক সত্যের ক্রস-মিসিং করে সত্যটা বের হয়ে আসবে। আমরা তরুণরা প্রকৃত সত্যটা জানতে চাই। শ্রদ্ধা দিতে চাই প্রতিজনকে।
দেখুন ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ এইটা গুরুত্বপূর্ণ আলাপ না। এটাকে সমাধান করার কিছুই নাই। মুল আলাপ হইলো, যুদ্ধে কারা কারা আমাদের সাথে ছিলো। কারা কারা আমাদের ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। কারা আমাদের থেকে সুবিধা নিতে চেয়েছিলো। কারা ক্ষমতার নেশায় ছিলো। কারা আসলে ছিলো আসল দেশিপ্রেমিক, তাদের আমরা শ্রদ্ধা করতে চাই। যারা দেশপ্রেমিক ছিলোনা তাদের ঘৃনা করতে চাই।
তবে এই কথা সত্য যে, পাকিস্থান থেকে যে কারনে আমাদের দেশের তৎকালীন মানুষ মুক্তি চেয়েছিলো সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে ভারত। ভারত আমাদের স্বাধীন হতে সাহায্য করেছে এটা যেমন সত্য তেমনি তারা চেয়েছিলো আমাদেরকে তাদের নিয়ন্ত্রণে সর্বদা রাখতে। এই কথা বুঝার জন্য আপনাকে খুব জ্ঞানী হতে হবেনা। জ্ঞানী হতে হবে ভারতের কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে। তারা কিভাবে এবং কোন মডেলে আপনাকে সাহায্য করে এবং আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে তা জানতে।
ছোট্ট কথা দিয়ে এই আলাপ শেষ করি। মুক্তিযুদ্ধ একটি লম্বা সময়ের গল্প। তখন যেহেতু এতটা আধুনিক কিছুই কিছু ছিলোনা তাই অনেক গল্পই আসেনি সব জায়গায়। এখন সব আধুনিক। কোন কিছুই লুকিয়ে রাখা যায়না, যাবেনা। ইতিহাস আপনার গতর বেয়ে বেয়েই মুখ খুলবে। আপনি কোন উদ্দেশ্যে কোনকিছুকে ব্যবহার করবেন ও করছেন তার মুখোশ কেউনা কেউ খুলে ফেলবেই। তাই মিথ্যের প্রচার টিকবেনা এই আধুনিকতায়। আপনি যতবড় যুদ্ধি দিয়েই মিথ্যে রচনা করেন। হয়তো সময় লাগবে বাট প্রকাশ পাবে নিশ্চিত থাকেন সব । সব মানে সব। তরুণদের উচিৎ শুধু সুন্দর প্লাটফর্ম নিশ্চিত করা।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার খুচরা আলাপ ।। মিনহাজ উদ্দিন
